বেরোবির ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ

বেরোবি প্রতিনিধি
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:১২
শেয়ার :
বেরোবির ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের এক নবীন নারী শিক্ষার্থীকে ক্লাসের কথা বলে ডেকে এনে র‌্যাগিং ও মানসিক হয়রানির অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলকর্মী সানজিদ সরকারের (স্মরণ) বিরুদ্ধে।

অভিযোগকারী ওই শিক্ষার্থী জানান, তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে দুই ঘণ্টা আটকে রেখে ফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং মানসিক হয়রানি করা হয়। এ ঘটনায় গত ১০ সেপ্টেম্বর (বুধবার) ওই শিক্ষার্থী বিভাগীয় প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

গতকাল মঙ্গলবার ওই অভিযোগের একটি কপি সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। সানজিদ সরকার লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী। 

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ১৬ ব্যাচের স্মরণ নামের একজন ইমিডিয়েট সিনিয়রসহ আরও কয়েকজন সিনিয়র গত ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট মিথ্যা কথা বলে ক্লাস না থাকা সত্ত্বেও ক্লাস আছে বলে ডেকে নেয়। এ সময় ক্লাসের সিআরসহ আরও অনেকে সবার সামনে প্রকাশ্যে আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অশালীনভাবে আমাকে অপমান করে। এ সময় আমাকে আমার বক্তব্য দেওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। 

অভিযোগে তিনি আরও বলেন, ‘শুধু তাই নয়, এই ঘটনার পর আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখা হয় এবং আমার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। আমার অভিভাবকরা আমাকে বারবার ফোন করেও পায়নি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা আমাকে সরাসরি হুমকি দেয় যে, আমি যেন প্রক্টর অথবা অন্য কোনো শেল্টার থাকলে নিয়ে যাই। তারা আমাকে আরও হুমকি দেয়, প্রক্টরের টেবিল চাপড়িয়ে কথা বলে। এমনকি সেখানে তারা শিক্ষকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে।’

এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। তিনি তার মানসিক সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান। অন্যথায় তিনি আর ক্যাম্পাসে থাকা সম্ভব হবে না এবং বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হবেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রদলকর্মী সানজিদ সরকার (স্মরণ) বলেন, ‘ওটা মিথ্যা অভিযোগ ছিল। ক্যাম্পাসে আসার আগে থেকেই ব্যক্তিগত মানুষের সঙ্গে ওই মেয়েকে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জায়গায় আপত্তিকর অবস্থায় দেখা গেছে। আমরা ভেবেছিলাম এটা ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেব। কিন্তু পরে আর দেই নাই। এজন্য তাকে ডেকে এনে বলেছিলাম, এগুলো করা ঠিক না, এভাবে সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া তাকে ডিপার্টমেন্টের বা ক্যাম্পাসে কোনো প্রোগ্রামে পাওয়া যায় না। যেখানে জুনিয়রদেরকে বলা হলে সবাই থাকে, কিন্তু তাকে পাওয়া যায় না।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব রাশেদ মন্ডল বলেন, ‘আমি নিজে তাকে (স্মরণ) ডেকে কথা বলব। যদি অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। ছাত্রদল কখনই এ রকম আচরণ সাপোর্ট করে না।’

লোকপ্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘একটা অভিযোগ পেয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তখন তারা ওই মেয়ের নামে উল্টা গুরুতর অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে ভাবতেছি, একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি তোলা হবে। সেখানে সমাধান না হলে শৃঙ্খলা বোর্ডে পাঠানো হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। ও্বই মেয়েটা বিভাগীয় বরাবর অভিযোগ দিয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর একটা রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেবে। সেখান থেকে শৃঙ্খলা কমিটিতে বিষয়টি তোলা হবে।’