৪ বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত চলছে

অনলাইন ডেস্ক
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৬
শেয়ার :
৪ বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত চলছে

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোসর ও অনিয়মের অভিযোগে বিচার কাজ থেকে বিরত রাখা ১২ বিচারপতির মধ্যে চার বিচারপতির বিষয়ে এখনো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে তদন্ত চলছে। আজ শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম।

এই ১২ জনের মধ্যে সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান পদত্যাগ]পত্র জমা দেন। ৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি এ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৫ অক্টোবর রাতে ‘দলবাজ, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর’ বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও করতে ফেসবুকে ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম।

১৬ অক্টোবর দুপুরে মিছিল নিয়ে হাইকোর্ট চত্বরে আসেন শিক্ষার্থীরা। হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে দক্ষিণ গেট দিয়ে ঢুকে তারা হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে অবস্থান নেন।  তাদের সঙ্গে ছিলেন সারজিস আলমও। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

এই কর্মসূচি চলার মধ্যে বেশ কয়েকজন বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনার পর ১৬ অক্টোবর বিকেলে ছাত্রদের সামনে এসে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি)। বক্তব্যে বিচারপতি অপসারণের বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, ‘বিচারপতিদের পদত্যাগে আপনাদের যে দাবি, আসলে বিচারপতিদের নিয়োগকর্তা হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। পদত্যাগ বা অপসারণ; সেই উদ্যোগও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে হয়ে থাকে। এখানে প্রধান বিচারপতির যেটা করণীয় তিনি সেটা করেছেন। আপাতত ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। বেঞ্চ না দেওয়ার অর্থ হলো, ২০২৪ সালের ২০ (অক্টোবর) যে কোর্ট খুলবে, তারা বিচার কাজে অংশ নিতে পারবেন না।’

বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহালের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কার্যক্রম শুরু করে। কাউন্সিলের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী।

কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এই কাউন্সিল যাচাই-বাচাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ পাঠান। সংবিধান অনুসারে, প্রধান বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ দুইজন বিচারপতির সমন্বয়ে এ কাউন্সিল গঠিত হয়। এরপর কয়েকজন বিচারপতির অপসারণের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে কাউন্সিল।

এক বার্তায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতির বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি তাদের বেঞ্চ প্রদান থেকে বিরত থাকেন। তাদের মধ্যে একজন (বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন) গত ৩০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে নিজ স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন।

এ ছাড়া দুইজন বিচারপতি (বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম এবং বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন) হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি। ২০২২ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই তাদের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে আরও ছয় মাসের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। গত ৩০ জানুয়ারি তাদের সেই বর্ধিত মেয়াদও শেষ হয়।

অপর দুইজন বিচারপতি (বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান এবং বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস) ইতোমধ্যে অবসর গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান গত ৩০ ডিসেম্বর এবং বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস গত ৩০ জানুয়ারি তাদের চাকরিকালীন মেয়াদ পূর্ণ করে অবসরে যান।

এদিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর রাষ্ট্রপতি দুইজন বিচারপতিকে অপসারণ করেন। এর মধ্যে বিচারপতি খিজির হায়াতকে গত ১৮ মার্চ এবং বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে গত ২১ মে অপসারণ করা হয়। সর্বশেষ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি। এখন অপর চার (৪) বিচারপতির বিষয়ে বর্তমানে কাউন্সিলের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।