সংকটে পরিসংখ্যান বিভাগ, ৩ শিক্ষক দিয়ে ১৬২ শিক্ষার্থীকে পাঠদান
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের পরিসংখ্যান বিভাগ নানান সংকটে জর্জরিত। শিক্ষক সংকট, স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু না থাকা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বল্পতায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম।
জানা গেছে, বিভাগটিতে স্নাতক পর্যায়ের ৫ ব্যাচে বর্তমানে ১৬২ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। অথচ স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৪ জন। এর মধ্যে একজন রয়েছেন শিক্ষাছুটিতে। ফলে ৩ জন শিক্ষককে ক্লাস, পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর প্রভাবে শিক্ষার্থীরা পড়েছেন সেশনজটে।
এছাড়া বিভাগে এখনো স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু না হওয়ায় ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার এ ধাপ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তারা বাইরে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ভোগান্তিতে পড়ছেন।
অন্যদিকে, ১৬২ শিক্ষার্থীর এ বিভাগে রয়েছেন মাত্র ১ জন কর্মকর্তা ও ১ জন কর্মচারী। সেমিনার লাইব্রেরিতে নেই কোনো লাইব্রেরিয়ান। ফলে লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। একইভাবে দুটি কম্পিউটার ল্যাবে নেই কোনো ডেমোনস্ট্রেটর, যার কারণে সফটওয়্যার বা প্রযুক্তিগত সমস্যায় পড়লে শিক্ষার্থীদের নিজেরাই সমাধান করতে হয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘এ সমস্যাগুলোর সমাধানে তারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানালেও এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। ৫ আগস্টের পর একাধিকবার উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেও কেবল আশ্বাসই পেয়েছি।’
পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নূর হোসাইন বলেন, ’দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটে আমাদের বিভাগ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ৫ ব্যাচের জন্য মাত্র ৩ জন শিক্ষক রয়েছেন। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে, এতে পাঠ্যক্রমে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। শিক্ষক সঙ্কটের কারণে মাস্টার্স প্রোগ্রামও চালু করা যাচ্ছে না। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন রনি বলেন, ‘৩ জন শিক্ষকের পক্ষে এত বড় একাডেমিক চাপ সামলানো অসম্ভব। আমাদের নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। সেমিনার লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারছি না। ল্যাবের সফটওয়্যার ইনস্টল বা সমস্যার সমাধান আমাদেরকেই করতে হয়। একজন ডেমোনস্ট্রেটর থাকলে এ ভোগান্তি হতো না।’
এ বিষয়ে বিভাগের প্রধান মোসা. তাওয়াবুন্নাহার বলেন, ‘একজন শিক্ষককে ৭-৮টি কোর্স নিতে হচ্ছে। এ ধরনের চাপের মধ্যে বিভাগকে স্বাভাবিকভাবে চালানো কঠিন। এসবের মাঝে স্নাতকোত্তর চালু করার কথা ভাবছি না। স্থায়ী শিক্ষক ও পর্যাপ্ত কর্মচারী অতিদ্রুত প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
এদিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি ইতোমধ্যে ইউজিসিকে একাধিকবার জানিয়েছি। শুধু পরিসংখ্যান বিভাগ নয়, আরও কয়েকটি বিভাগেও শিক্ষক সংকট রয়েছে। সামনে ইউজিসির সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি আবারও উত্থাপন করব। আশা করছি দ্রুতই সমাধান হবে।’
উল্লেখ্য, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।