ঐক্যকে শাণিত করে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে: রাষ্ট্রদূত মুশফিক

কূটনৈতিক প্রতিবদেক
০১ আগস্ট ২০২৫, ১৪:৪৭
শেয়ার :
ঐক্যকে শাণিত করে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে: রাষ্ট্রদূত মুশফিক

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনকে ইতালির একনায়ক মুসোলিনির কার্বন কপি বলে মন্তব্য করেছেন মেক্সিকোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী। তিনি বলেন, ইতালিতে মুসোলিনিকে ঘিরে স্তাবক শ্রেণি তৈরি হয়েছিল, তাকে ভাবা হত সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে, সর্বেসর্বা, তিনি যাই ভাবেন তাই সেরা, তিনি যা বলেন সেটিই সবচেয়ে বড় কথা। এই ব্যবস্থাটার হুবহু কার্বন কপি ছিল শেখ হাসিনার শাসন ব্যবস্থা। মুসেলিনির ব্ল্যাক শার্ট বাহিনীর আদলে হাসিনা গড়ে তোলেন হেলমেট বাহিনী ছাত্রলীগ।

গতকাল বৃহস্পতিবার মেক্সিকো সিটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

পতিত ফ্যাসিবাদি দল আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘আপনারা যদি মনে করেন তারা ওপারে বসে কেবল সময় কাটাচ্ছে আর বাইজি নাচাচ্ছে, তাহলে সেটা বড় ভুল। এর বাইরেও কিন্তু তারা ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। এই ষড়যন্ত্র বিস্তৃত হবে তখনি যখন আমাদের মধ্যে অনৈক্য, বিভেদ, দ্বন্দ্ব আর অবিশ্বাস প্রসারিত হবে।’

পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনের কড়া সমালোচনা করে রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘কেউ যদি মুসোলিনির বিরুদ্ধে কথা বলতো তাকে সঙ্গে সঙ্গে ধরে কারাগারে নিক্ষেপ করা হতো অথবা তার জীবন চলে যেতে। বহু মানুষের জীবন গেছে। মুসোলিনি বিরোধীদের দমন করতে ব্ল্যাক শার্ট বাহিনী তৈরি করেছিলেন। তাদের কাজই ছিল যারা মুসোলিনির বিরোধীতা করতো তাদের ধরে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতো।’

তিনি বলেন, ‘হেলমেট বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে মানুষের মুক্ত মতকে রুদ্ধ করলেন, মানুষের অধিকার কেড়ে নিলেন। সেই সঙ্গে কিছু স্তাবক শ্রেণি কথিত বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিকও তিনি পেয়ে গেলেন, যারা তার দুঃশাসনের আবহ তৈরি করে দিয়েছিল। এই স্তাবক শ্রেণি তার আরাধনায় নিয়োজিত ছিল। এভাবে করে তিনি বাংলাদেশকে দেড় দশক ধরে শাসন করলেন।’ 

গণহত্যার বিচার দাবি করে মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিচার যদি নিশ্চিত না করা হয়, খুনিদের বিচার যদি নিশ্চিত না করা হয় তাহলে আমাদের লক্ষ্যের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। বাংলাদেশের মানুষ এটি সহ্য করবে না। এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। তিন-তিনটি নির্বাচন চলে গেছে, বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। একটি প্রজন্ম গড়ে উঠেছে- ভোট কী জিনিস, ভোট কেন্দ্র কী জিনিস তা তারা জানেনা। তাদের সেই ভোটের নিশ্চয়তা দেওয়া সবার দায়িত্ব।’

রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘সবাই মোটাদাগে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন বলে দেশে একটি অধিকারের আবহ বিরাজ করছে। যে যা ইচ্ছে বলতে পারছেন। যারা কয়দিন আগে শেখ হাসিনার পদলেহন করেছেন তারাও কিন্তু সুন্দর সুন্দর বাণী দিচ্ছেন, সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে কী অবস্থায় পেয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সবকিছু দুমড়ে-মুচড়ে একাকার করে রেখে গেছে, কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, কোনো সেন্সিবল মানুষ গভরনেন্সে নাই, তল্পিবাহকে পরিণত হয়েছে বিগত ১৫টি বছর, ফরেন কারেন্সি খালি করে দিয়েছে, বিলিয়ন, বিলিয়ন ডলার তারা বিদেশে পাচার করেছে- এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যখন কোনো সরকার আসে সেটা সহজ কোনো কাজ নয়। এটা খুব কঠিন কাজ।’

রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘আমাদের অনেক কাজ বাকি। সব সেক্টরে রিফর্ম করতে হবে। আমলাতন্ত্রে রিফর্ম দরকার। যে আমলাতন্ত্র বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে, বিগত ১৫ বছর শেখ হাসিনাকে মুসোলিনি সাজিয়ে তারা কবিতা, গান লিখেছে, বই লিখেছে, তাদের কাজ নয় এসব। তারা মূর্তি বানিয়েছে। এদের চিহ্নিত করতে হবে, এরা যেন ফ্রন্টলাইনে না থাকে, পলিসি মেকিংয়ে না থাকে।’

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, ‘বাংলাদেশের ছাত্রদের, সাধারণ মানুষের, রাজনৈতিক দলগুলোর যে অর্জন এটি বৃথা হতে দেওয়া যাবেনা। আমাদের ব্যক্তি স্বার্থ, পছন্দ-অপছন্দ, দ্বিমত থাকতেই পারে, গণতন্ত্র মানে এই নয় যে, সব বিষয়ে সব মানুষ একমত পোষণ করবে। মতের ভিন্নতা থাকবেই। মতপার্থক্য যেন মতবিরোধে রূপ না নেয়। এটা যেন হিংসা বা বিদ্বেষে পরিণত না হয়। যে বাবা তার ছেলেকে হাত ধরে মিছিলে পাঠিয়েছেন তিনি কিন্তু সেই আগের দুঃশাসনের বাংলাদেশ ফেরত চাননা।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন দূতাবাসের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল। এসময় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি এবং চিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরিবেশন করা হয় দেশাত্মবোধক গান। হেড অব চ্যান্সেরি আব্দুল্লাহ আল ফরহাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মেক্সিকোতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন।