কলেজ নির্বাচনে যে বিষয়গুলো জানা জরুরি
সম্প্রতি ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুলাই থেকে শুরু হবে একাদশ শ্রেণির ভর্তির আবেদন। নীতিমালা অনুযায়ী এবারও তিনটি ধাপে ভর্তির আবেদন নেওয়া হবে। আবেদন করার আগে কে কোথায় ভর্তি হবেন, কোন গ্রুপে ভর্তি হবেন তা এখনই নির্বাচন করা জরুরি। পছন্দের তালিকায় কোন কলেজ রাখবেন এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক ভালো কলেজে ভর্তির আসন পূর্ণ হয়ে যাবে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী দিয়েই। ফলে শিক্ষার্থীদের অন্য কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগও খুঁজতে হবে। অভিভাবকদের ধারণা ভালো কলেজে ভর্তি হলেই ভালো ফলাফল করা যায়, তাই যে করেই হোক নামিদামি কলেজেই ভর্তি হতে হবে। এটি একটি বড় ধরনের ভুল ধারণা। ভালো কলেজের শিক্ষার্থীরাও অকৃতকার্য হয় আবার এসএসসির চেয়ে এইচএসসিতে অনেক খারাপ রেজাল্ট করেছে এমন নজির অনেক রয়েছে। ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা চায় নামিদামি কিংবা যেসব কলেজের ফলাফল বরাবরই ভালো এবং দেশজুড়ে নাম আছে এমন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে।
এ ছাড়া এমন কিছু শিক্ষার্থী আছেন যারা বেশ নাম করা বেসরকারি কলেজে ভর্তি হতে চান, শিক্ষার্থীরা মনে করেন বেসরকারি কলেজগুলোর আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাসহ অবকাঠামো উন্নত। আবার কিছু শিক্ষার্থী চায় এমন কোনো কলেজে ভর্তি হতে যেখান থেকে সে মোটামুটি উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করতে পারবে। যে যেখানেই ভর্তি হোন না কেন, প্রতিটি শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত-
ফলাফল: এসএসসির ফলাফলের দ্বারাই অনেকটা নির্ধারণ হয়ে যায় ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর একাদশ শ্রেণিতে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে, কোন কোন প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে না। কলেজগুলোরও চাহিদা থাকে যে, কোন মানের ফলাফলের নিচে শিক্ষার্থী তারা নেবে বা নেবে না।
কলেজের মান: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত অবস্থা, লোকেশন, পরিচিতি এবং অনলাইন থেকে বিগত কয়েক বছরের ফলাফল ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত হলেই জানা যাবে কলেজের মান।
অর্থ নির্বাহ: কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেমন খরচ হয় তা আগে থেকেই জানা দরকার। এ ছাড়া কলেজের ফেসবুক পেজ অথবা ওয়েবসাইট থেকেও জানা যায় প্রতিষ্ঠানের খরচ। বর্তমান সময়ে যেহেতু প্রাইভেট পড়ার প্রবণতা রয়েছে, কলেজের কাছাকাছি বাসা ভাড়া করে থাকতে হবে কিনা এই বিষয়গুলো নিয়ে একটু ভাবা উচিত, খোঁজ নেওয়া উচিত যে, কোথায় ভর্তি হলে বা করালে অর্থের পরিমাণ কিছুটা হলেও কম লাগবে। আবার অর্থ থাকলেই যে ব্যয় করতে হবে সেটিরও বিশেষ কোনো মানে নেই।
দূরত্ব: কলেজ নির্বাচন করার আগে বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব নিয়ে ভাবা দরকার। কেননা কলেজের দূরত্ব বাড়ির কাছাকাছি হলে যাতায়াত করতে সহজ হয়। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সিলেবাস এসএসসির সিলেবাসের থেকে অনেক অনেক গুণ বড় এবং সেই তুলনায় সময় অনেক কম পাওয়া যায় যা বাস্তবে দেড় বছরেরও কম। কলেজ যদি বাসা থেকে অনেক দূরে হয় তাহলে যাতায়াতে অনেক সময় নষ্ট হবে। আর দিনশেষে তুমি ক্লান্ত হয়ে যাবে। তাই পড়ালেখায় মন বসানোর জন্য শরীর সুস্থ থাকাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন:
গণভবনে ডাক পেলেন আ. লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
ল্যাবরেটরি সম্পর্কে জানা: এইচএসসি পরীক্ষার ব্যবহারিক অংশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য। খুব কম কলেজে রয়েছে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ল্যাবরেটরি। অনেক কলেজে ল্যাবরেটরি থাকলেও ভালো প্রদর্শক নেই, প্রদর্শক না থাকায় খুব বেশি শেখার সুযোগ থাকে না, যা পাবলিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে বাধাগ্রস্ত করে। তাই কলেজের ল্যাবরেটরি অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে কলেজ নির্বাচন করা উচিত।
কলেজ নির্বাচন: কলেজের পরিবেশ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এমন অনেক কলেজ আছে যেখানে হয়তো পড়ালেখায় ভালো, রেজাল্ট ভালো কিন্তু পরিবেশ ভালো নয়, অভিভাবকদের উচিত এ ধরনের কলেজ এড়িয়ে যাওয়া। কারণ কলেজের সময়টায় ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটু স্বাধীনচেতা মনোভাব চলে আসে, তখন তারা কার সঙ্গে মিশছে, কেমন পরিবেশে পড়ছে এসব দিক দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের দেশে এখনো কোনো একটা কলেজ ভালো বা খারাপ এটি নির্বাচন করা হয় বেশির ভাগ সময়েই কলেজটির পূর্ববর্তী বছরগুলোর রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে। অনলাইনে কলেজ নির্বাচনে তোমাকে একটি তালিকা তৈরি করতে হবে সব থেকে বেশি পছন্দের কলেজের স্থান হবে সবার ওপরে এবং পর্যায়ক্রমে কম পছন্দের কলেজগুলোর স্থান নিচে নিচে সাজাতে হবে
বিভাগ নির্বাচন: এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করলেও ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক শাখায় ভর্তি হয় অনেকে। এসএসসি ও এইচএসসির সিলেবাসের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তাই বিভাগ পরিবর্তন করার বিষয়টা খুব চিন্তাভাবনা করে নেওয়া উচিত। আমি এই বিভাগে পড়তে পারব কিনা। এ ছাড়া বিভাগ পরিবর্তন করতে হলেই সেই বিভাগের বিষয়গুলো সম্পর্কে আগে থেকে একটু ধারণা নিয়ে রাখা ভালো হবে। বিভাগ পরিবর্তনে আরেকটি বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত সেটি হচ্ছে আর্থিক সামর্থ্য। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাইভেট বা কোচিং করতে হয়। প্রাইভেট বা কোচিং করার আর্থিক সামর্থ্য আছে কিনা ভেবে দেখতে হবে।
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
বিষয় নির্বাচন: বিষয় নির্বাচন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিভাগভিত্তিক দুটি বিষয় আবশ্যিক থাকে তার পর একটি ঐচ্ছিক এবং অপরটি চতুর্থ বিষয়ে হিসেবে নির্বাচন করতে হয়। যে বিষয় ভালো বুঝবে তার জন্য সেই বিষয়টি নির্বাচন করা উচিত। এক্ষেত্রে অন্য কারও কথা শুনে বা বন্ধুরা নিচ্ছে বলে নিজে ভালো না লাগলেও সেই বিষয় নির্বাচন করা উচিত নয়। কোন বিষয়ে ভালো নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি সেদিকেও খেয়াল রেখে বিষয় নির্বাচন করতে হবে।