দুর্নীতির মামলায় সাজা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন: মহানগর দায়রা জজ
আগে দুর্নীতি হতো ৫০ কোটির, এখন তা ৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, অথচ সাজা একই আছে। এই অবস্থায় দুর্নীতির মামলায় শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব।
আজ বুধবার জনতা ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা ২৯৭ কোটি টাকার দুর্নীতি মামলার শুনানিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। এদিন মামলার প্রধান আসামি ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাতকে তিন দিনের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
আসামি পক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম। অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জামিনের বিরোধিতা করেন।
উভয় পক্ষের শুনানির শেষে বিচারক বলেন, ‘আজ এক জন (নাসা গ্রুপের কর্ণধার ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার) বলেছেন, আমাকে জামিন দিলে সব টাকাই শোধ করে দেব। আমি পালিয়ে যাব না। গ্রেপ্তারের পর কেন এমন বোধদয় হয়। ওয়ান ইলেভেনের সময় টুথ কমিশন হয়েছিল, সেখানে কিছু লোক আপরাধ স্বীকার করেছিল। দুর্নীতি এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। আগে দুর্নীতি হইতো ৫০ কোটি টাকার, এখন সেখানে দুর্নীতি হচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকার। সাজা একই আছে। তাই আমি মনে করি দুর্নীতির মামলার সাজা বাড়ানো প্রয়োজন। তানা হলে দুর্নীতির লাগাম টানা সম্ভব হবে না।’
এরপর তিনি মামলার রিমান্ড শুনানি মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হবে বলে শুনানি শেষ করেন।
এর আগে গত ১০ জুলাই ড. আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গত ১১ জুলাই এই মামলায় সিএমএম আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় ১ এই মামলা দায়ের করেন প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন- জনতা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ও পরিচালক মো. আবু তালহা, জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও মহাব্যবস্থাপক (পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও) আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) অজয় কুমার ঘোষ, সাবেক ব্যবস্থাপক (শিল্প ঋণ-১) মো. গোলাম আজম, এসএমই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, এসইও মো. এমদাদুল হক, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক ও সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. গোলাম ফারুক, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক, এফসিএ মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ, নিতাই চন্দ্র নাথ, অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুছ বাদল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক সহকারী পরিচালক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান।
মামলায় বলা হয়, ব্যাংকে বন্ধক রাখা জমির মালিক হওয়ার আগেই ঋণ গ্রহীতা নিজের বলে এবং স্থাপনা দেখিয়ে ব্যাংকে বন্ধক রাখে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ‘প্রতারণা, মিথ্যা নথি তৈরি, জালিয়াতির’ মাধ্যমে জমিতে বাস্তবে কোনো স্থাপনা বা কারখানা না থাকা সত্ত্বেও মূল্যায়ন করে। স্থাপনাবিহীন ৩ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় কেনা জমিকে ১৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা মূল্যায়ন করা (অতি মূল্যায়ন) হয়। এর মাধ্যামে ঋণ অনুমোদন, বিতরণ এবং গ্রহণের মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা ‘আত্মসাৎ’ করেছেন আসামিরা।
আরও পড়ুন:
ভারত সফরে গেলেন প্রধান বিচারপতি