মাভাবিপ্রবিতে থ্যালাসেমিয়া এ্যাওয়ারনেস সেমিনার
টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) থ্যালাসেমিয়া এ্যাওয়ারনেস এন্ড স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইন নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আখন্দ।
গতকাল রবিবার বায়োটেডের উদ্যোগে, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বেইস কেয়ার ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় এবং জেনেক্স হেলথের কারিগরি সহায়তায় দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে পরিচালিত থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা এবং স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেক ক্লাব।
সভাপতিত্ব করেন বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম মহিউদ্দিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়োটেডের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ সওগাতুল ইসলাম। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর মোহাম্মদ আবু জুবায়ের, প্রক্টর প্রফেসর মোহাম্মদ ইমাম হোসেন এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালক প্রফেসর ফজলুল করিম।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা তৈরির এই উদ্যোগের ভূয়সি প্রশংসা করেন।
তারা বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিতে থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয় কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয়কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার উদ্যোগ নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
সেমিনারে বায়োটেডের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ সওগাতুল ইসলামের নেতৃত্বে সারাদেশের বিভিন্ন বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক সচেতনতা এবং ফ্রি স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে মূল বক্তা বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতে করণীয় তুলে ধরেন।
বক্তব্যে বলা হয় থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে এবং বাংলাদেশে একটি নীরব মহামারী চলছে। বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি থ্যালাসেমিয়া বাহক রয়েছে। এই সংখ্যার প্রায় অর্ধেক তরুণ এবং বিবাহযোগ্য নর-নারী। এদের অধিকাংশই জানেন না তারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না। এই অজ্ঞতার কারণে ভবিষ্যতে তাদের সন্তানে থ্যালাসেমিয়া রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই মুহূর্তে সচেতন না হলে আগামী ১ দশকে বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে। তৈরি হতে পারে জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় রকমের হুমকি। থ্যালাসেমিয়া মুক্ত সুস্থ সবল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পেতে হলে এখনই সচেতন হওয়া ছাড়া আমাদের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন অনুষ্ঠানের মূল বক্তা। থ্যালাসেমিয়া রোগের সহজ কোনো চিকিৎসা নেই। যে সকল চিকিৎসা রয়েছে তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
অপরদিকে, বিয়ের পূর্বে সাধারণ একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক শনাক্ত করা সম্ভব হলে এবং বাহক বাহকে বিয়ের সংখ্যা কমানো হলে সন্তানদের মাঝে থ্যালাসিমিয়া রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সেই জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা এবং প্রতিটি বিবাহযোগ্য নারী পুরুষের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক শনাক্তকরণ।
ড. সওগাত জাতীয় পর্যায়ে বৃহৎ পরিসরে শনাক্তকরণ কর্মসূচি পরিচালনার মাধ্যমে এই রোগটিকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
তিনি বলেন, সরকার উদ্যোগী হলে বাংলাদেশের থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে নীতি নির্ধারণে পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদের প্রতি বিষয়টির উপর গুরুত্ব আরোপ করার আহ্বান জানান।
বায়ো টেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি, ফার্মেসিসহ অন্যান্য বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী সেমিনারে এবং ফ্রি স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করেন। বায়োটেডের উদ্যোগে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে এই কর্মসূচিটি পরিচালনা করা হবে বলে জানানো হয়।
সেমিনারে মূল বক্তা ড. মুহাম্মদ সওগাতুল ইসলাম বলেন, এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থ্যালাসেমিয়া রোগের বিরুদ্ধে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব। ধীরে ধীরে সেই কর্মসূচি সামাজিক পর্যায়েও ছড়িয়ে দিতে হবে। থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করতে হলে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন এবং সামাজিকভাবে এই সমস্যার মোকাবেলা করা সম্ভব হলে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা সম্ভব। সচেতনতাই হচ্ছে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করার প্রথম পদক্ষেপ।