উদীচী ফ্রান্স সংসদের আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা

ফ্রান্স প্রতিনিধি
১৯ মে ২০২৫, ১২:১৭
শেয়ার :
উদীচী ফ্রান্স সংসদের আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা

ফ্রান্সের উবারভিলিয়ে শহরে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ‘বৈশাখী মেলা’। গতকাল রবিবার বিকাল তিনটায় উদীচী ফ্রান্স সংসদের উদ্যোগে এই মেলার আয়োজন করা হয়। আয়োজনের শুরুতেই ‘বাংলার লোক সংগীত ও সংগ্রাম’ শ্লোগানে মেলায় বাঙালি সংস্কৃতির এক প্রাণবন্ত চিত্র ফুটিয়ে তোলে।

শিশু-কিশোরদের জন্য বিশেষভাবে আয়োজন করা চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রায় পঞ্চাশাধিক শিশু। উদীচী ফ্রান্সের কোষাধ্যক্ষ রোমানা আফরোজের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিশুরা বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে চিত্রের মাধ্যমে জীবন্ত করে তোলে।

চিত্রাংকনের পর বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রা মেলার অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে গড়ে ওঠে। যেখানে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্ষবরণের আনন্দ ভাগাভাগি করে।

বাংলাদেশের স্বনামধন্য সংগীত ব্র্যান্ড ‘জলের গান' এর গীতিকার ও শিল্পী রাহুল আনন্দ, চিত্রশিল্পী উর্মিলা বসাক শুক্লা ও শিশু শিল্পী চন্দ্রবিন্দু তোতা দুই সপ্তাহ ধরে মুখোশ, ফেস্টুন ও প্লাকার্ড প্রস্তুত করে মেলাকে প্রামাণিকতা ও সজীবতা প্রদান করেন।

উবারভিলিয়ে মেয়রের আর্ট প্লাস্টিক বিভাগের পরিচালক ম্যাডাম লেনা মোনিয়ে ছিলেন চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার বিশেষ বিচারক।

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন উদীচী ফ্রান্স সংসদের সভাপতি কিরণ্ময় মণ্ডল। তারপরে অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন উবারভিলিয়ে মেয়রালিটির সংস্কৃতি বিষয়ক সহকারী মেয়র জাকিয়া বুদিজি, সহকারী মেয়র সানন্দ্রিন দেজির, ভিল দো মুজিক দো মন্দের পরিচালক কামেল দা ফ্রী, প্রাক্তন সহকারী মেয়র আন্তনী দাগে, লা ফন্স আনসুমী পার্টির সাধারণ সম্পাদক গিয়োম লুসকেত এবং ভাষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক কার্লোস সামেদু।

বাংলাদেশ কমিউনিটির বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে উৎসবের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি করেন। তাদের মধ্যে কবি মনির কাদের, শিক্ষক হাসনাত জাহান, কমিউনিটি নেতা শাহীন আরমান চৌধুরী, গাজীপুর জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক খান ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের রাকিবুল ইসলাম উল্লেখযোগ্য ছিলেন।

সাংস্কৃতিক পর্বে উদীচী পরিচালিত বাংলা ভাষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিশু-কিশোররা গান, কবিতা ও নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মনোরঞ্জন করেন। সাংস্কৃতিক এই মহোৎসবের যৌথ পরিচালনা করেন কোষাধ্যক্ষ রোমানা আফরোজ ও সংগীত বিভাগের নির্বাহী সম্পাদক সুস্মিতা বড়ুয়া।

সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল ‘জলের গান’ ব্যান্ডের গায়ক রাহুল আনন্দের মনোগ্রাহী সংগীত পরিবেশন, যা হাজারো দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করে।

অনুষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সংগীত পরিচালনায় ছিলেন সহ-সভাপতি রোজী মজুমদার, যন্ত্রানুসঙ্গ নির্দেশনায় সাগর বড়ুয়া, নৃত্য পরিচালনায় জি এম শরিফুল ইসলাম, নাট্য নির্দেশনায় প্রদীপ কুমার বড়ুয়া টিপু ও দীপক নিকোলাস গোমেজ। শিশুদের নাট্য পরিচালনায় ছিলেন রুমানা আফরোজ।

পুরো অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নেতৃত্ব দেন সভাপতি কিরণ্ময় মণ্ডল ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হাওলাদার। সংগঠনের বিভিন্ন সদস্য ও উপদেষ্টা পরিষদ অনুষ্ঠান সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বৈশাখী মেলায় দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার ও পণ্যগুলোর স্টল থাকায় উৎসবের পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত হয়। বৈশাখী মেলা বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য মেলবন্ধন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, যা প্রবাসে বাংলা নববর্ষের মহিমা বহন করে।