নাসায় যাচ্ছে রাজশাহী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ তরুণ শিক্ষার্থী

রাজশাহী ব্যুরো
১৮ মে ২০২৫, ১২:৫৬
শেয়ার :
নাসায় যাচ্ছে রাজশাহী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ তরুণ শিক্ষার্থী

দুই বছর আগেই নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের বাংলাদেশ পর্বে সেরা ৫০টি দলের ভেতরেও ছিল না টিম ভয়েজার্স। কিন্তু সেরাটা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা হয়েছিল প্রথম ধাক্কার পর। পুরো প্রজেক্টকেই আবার নাসার চাহিদামতো সাজানোর কাজ শুরু হলো। এবার ধরা দিলো সাফল্য। একমাস পরেই বেস্ট স্টোরিটেলিং ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল উইনার হলো টিম ভয়েজার্স।

এই দলটি রাজশাহীর বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের। ওই সফলতার জন্য নাসার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছে টিম ভয়েজার্স। আগামী ৪ জুনআমেরিকার মেরিল্যান্ডে অবস্থিত নাসার গোডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার জি গ্লোবাল উইনার্স সেলিব্রেশনে অংশ নেবেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। সকল প্রক্রিয়াও ইতোমধ্যে শেষ।

আগামী ২৫ মে টিম ভয়েজার্সে যাওয়ার জন্য দলনেতা হিসেবে থাকবেন খালিদ সাকিব। এছাড়াও আছেন আব্দুল মালেক, সাখাওয়াত হোসেন, ফাহমিদা আক্তার ও মো. আতিক। তারা সিএসই বিভাগের বিভিন্ন সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তারা ‘এভরিথিং স্টার্টস উইথ ওয়াটার’ নামের চ্যালেঞ্জে ‘অ্যাকুয়া এক্সপ্লোরার’ নাম প্রোজেক্ট উপস্থাপন করেছিল। 

এর মূল লক্ষ্য ছিল- বিশ্বের পানি প্রবাহের পথ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির মত এই মহামূল্যবান সম্পদে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে তা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে সহজভাবে ইন্টারেক্টিভ গেম ও স্টোরিটেলিংয়ে মাধ্যমে বোঝানো।

শিক্ষার্থীদের শেখানোর উপযোগী একটি চমৎকার ডিজিটাল মাধ্যমে তারা তুলে ধরেন, বিশ্বে যেখানে ৩৭০ কোয়িন্টিলিয়ন গ্যালন পানি আছে, সেখানে মাত্র ০.০১ শতাংশ পানি নিরাপদ ও ব্যবহারযোগ্য। কীভাবে পানি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, জীববৈচিত্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সেটিও তুলে ধরা হয়।

এই সফলতার পর নাসার সদর দপ্তর সফরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি আমন্ত্রণ পেয়েছেন এই মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এতে তারা এখন উৎফুল্ল।

টিম ভয়েজার্সের দলনেতা খালিদ সাকিব বলেন, ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রিলিমিনারি সিলেকশনের ফলাফল প্রকাশিত হলে আমরা জানতে পারি, আমরা সেরা ৫০টি দলের মধ্যেও নেই। ফলে আমাদের ভার্চুয়ালি পার্টিশিপেট করতে হবে। ঢাকায় গিয়ে এই হ্যাকাথনে অংশ নিতে পারছি না। তখনও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি দল অনসাইটে পার্টিশিপেট করার সুযোগ পেয়েছিল। আমরা না পারার কারণে প্রথম প্রথম খারাপ লাগা কাজ করছিল। তবুও আমরা মনোবল ধরে রাখি এবং শেষ পর্যন্ত সকলেই সর্বোচ্চটা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করি। তাই পুরো প্রজেক্টটাকেই নতুন করে আবারও নাসার রিকোয়্যারমেন্ট অনুসারে সাজানো শুরু হয়। মাঝপথে বেসিসের মেন্টররাও আমাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিতে থাকেন’।

তিনি আরও বলেন, ‘২০২৩ সালের ৬ ও ৭ অক্টোবর ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যেখানে ১৫২টি দেশ থেকে ৮ হাজার ৭১৫টি দলে ৫৭ হাজার ৯৯৯ শিক্ষার্থী একযোগে এই ৩৬ ঘণ্টার হ্যাকাথনে অংশ নিই। আমরা টিম ভয়েজার্স বাংলাদেশ পর্বের লোকাল রাউন্ডে রাজশাহী রিজিওনে চ্যাম্পিয়ন হই। পরবর্তীতে আমাদের টিম গ্লোবাল নোমিনেশন পেয়ে ফাইনালিস্ট হয়। সেখানে বেস্ট স্টোরিটেলিং ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল উইনার হওয়ার গৌরব অর্জন করি।’

সহযোগিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমাদের পুরো ভ্রমণের সকল খরচ বহন করছে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশ্বদরবারে দেশের পতাকা তুলতে পারব ভেবে আমরা সত্যিই আনন্দিত।’

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের প্রধান সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘টিম ভয়েজার্সের সাফল্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বিশ্বের ১৫২টি দেশের ৮ হাজার ৭১৫টি দল এবং প্রায় ৫৮ হাজার প্রতিযোগির ৫ হাজার ৫৫৬টি প্রজেক্ট জমা পড়েছিল। এমন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্যিই গর্বের। নাসা আমাদের শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। 

সফরে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গবেষণাগার পরিদর্শন করবে। তারা বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এটা তাদের আরও বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাবে’।