অবশেষে জবিতে ভর্তি নিশ্চিত হলো চঞ্চল ও মইনুলের

জবি প্রতিনিধি
০২ মে ২০২৫, ১৪:২১
শেয়ার :
অবশেষে জবিতে ভর্তি নিশ্চিত হলো চঞ্চল ও মইনুলের

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মেধা-তালিকায় ২০২তম স্থান অর্জন করেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল। একই শিক্ষাবর্ষে এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৩৫৮ তম স্থান অর্জন করে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন মইনুল হক। কিন্তু টাকার অভাবে তাদের ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। তবে এবার সেই অনিশ্চয়তা কেটে গেছে।

জানা গেছে, মইনুলের বাড়ি কুড়িগ্রামের সীমান্ত ঘেঁষা ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিলুপ্ত হওয়া দেশের বৃহৎ ছিটমহলের দাসিয়ার ছড়ার দোলাটারী গ্রামে। ময়নুল হকের বাবা লুৎফর রহমান ছিলেন ইট ভাটার শ্রমিক। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। শত কষ্টের মাঝেও সন্তানদের পড়াশোনার কোন যেন ক্রুটি না হয় সে ব্যাপারে ছিলেন খুবই সজাগ। মইনুল ২০২২ সালে গংগারহাট এমএএস উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ এবং ২০২৪ সালে ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

কিন্তু মইনুলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার আনন্দের দিনই রাতের বেলায় মারা যান তার দীর্ঘদিনের অসুস্থ পিতা লুৎফর রহমান। বাবার মৃত্যু ও আর্থিক সংকটে মইনুলের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। পরে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সেই সংবাদ নজরে পড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের। তার ভর্তির দায়িত্ব নিয়েছে জবিস্থ কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদ।  

এ সংবাদ নজরে এসেছে ফুলবাড়ী উপজেলার নির্বাহী অফিসার রেহেনুমা তারান্নুমের। তিনি বিষয়টি জানতে পেরে তাকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ময়নুলের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। আমরা যতটুকু পারি সাহায্য করব।’

জানা গেছে, চঞ্চলের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দক্ষিণ চকদাড়িয়া গ্রাম। তার পিতা আব্দুস ছালাম পেশায় একজন দিনমজুর। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলেও ভর্তির টাকা দিতে পারছিলেন না তিনি। পরে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সেই সংবাদ নজরে পড়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলামের। এরপর তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। 

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী চঞ্চলের হাতে ভর্তি সংক্রান্ত আর্থিক সহয়তা প্রদান করেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার উন্নয়নকে সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে আসছি। অদম্য মেধাবীদের সহায়তা ও শিক্ষার মান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছি। আমার লক্ষ্য, অর্থের অভাবে যেন কারো লেখাপড়া বন্ধ না হয়।’

উপজেলা প্রশাসনের এই সহযোগিতা পেয়ে শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল বলেন, ‘ইউএনও স্যার আমার অসহায়ত্বের খবর পেয়ে আমার স্বপ্নপূরনে পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমি খুব আনন্দিত ও গর্বিত। আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলে মানুষের পাশে দাঁড়াব ইনশাআল্লাহ।’

কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্র কল্যাণ ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতার ব্যাপারে মইনুল হক বলেন, ‘ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম। এখন আমার ভর্তিসহ সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’

মেধাবী শিক্ষার্থী ময়নুল হক আরও বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। বাবা অনেক কষ্ট করে ইটভাঙায় শ্রমিকের কাজ করে আমার পড়াশুনার খরচ চালিয়েছেন। আমিও বাবার সংসারে সংসারে সহযোগিতা ও পড়াশোনার পাশাপাশি কখনও প্রাইভেট ও মানুষের জমিতে দিন মজুরীর কাজও করেছি। বাবার চিকিৎসার জন্য সংসারে যা কিছু ছিল সবই বিক্রি করা হয়েছে। বাবা-মার অনুরোধে অসুস্থ বাবাকে বাড়িতে রেখে মানুষের কাছে ধার-দেনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির কোচিং করতে ঢাকায় যাই। টাকার অভাবে কোচিং চলাকালীন সময়ে দিনের পর দিন রোজা রেখে ক্লাস করেছি। পরে ম্যাচের সহপাঠিরা জানতে পেরে তাদের সাথে খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।’