শিক্ষক-ছাত্রী কণ্ঠসদৃশ অডিও ফাঁস /
বেরোবিতে কুপ্রস্তাবের শর্তে ছাত্রীর সিজিপিএ বৃদ্ধি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. তানজিউল ইসলাম জীবন ও ওই বিভাগের এক ছাত্রীর কণ্ঠ সদৃশ কথোপকথনের তিনটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। এ থেকে জানা যায়, কুপ্রস্তাবের শর্তে মাস্টার্সের এক ছাত্রীর সিজিপিএ বৃদ্ধি করে দিয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষক।
গতকাল রবিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব অডিও ছড়িয়ে পড়ে।
ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে শোনা যায়, ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীকে ৩ দশমিক ১৬ রেজাল্ট থেকে ৩ দশমিক ৭০ করে দিয়েছেন এবং শিখিয়ে দিচ্ছেন কেউ জিজ্ঞাসা কী বলতে হবে।
অডিওতে শিক্ষক ছাত্রীকে বলেন, ‘আমি হিসেব পাতি করেই করেছি। তোমার বয়স অনেক কম। তুমি প্রথমে চাইছিলা “স্যার আমাকে ফার্স্ট করে দেন।” আমি দিতে পারতাম। কেন দেইনি। আজকে কি জবাবটা দিতাম?
ছাত্রী বলছেন, তখন আলাদা কথা। শিক্ষক আরও বলেন, একদম সাইলেন্ট। ছাত্রী বলেন, আমি একদম চুপচাপ আছি। আমার কাছ থেকে শুনবেন না স্যার আপনার সম্পর্কে খারাপ কথা বলেছি বা অন্য কাউকে বলেছি। কেউ জিজ্ঞাসা করলে ডিপলমেটিক এনসার দেব।
আরেকটি অডিও ক্লিপে শোনা যায়, শিক্ষক বারবার বলতেছেন তার পর বলো কি কথা ছিল? কি করবা বলো সেটা? বারবার এগুলো বলাও ঠিক না। ছাত্রী বলছেন, স্যার মাঝখানে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম পরে একটু প্রব্লেম হয়ে গিয়েছিল। যা কথা ছিল সেটাই হবে।
এদিকে এসব অডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ার পর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এ ছাড়া ওই শিক্ষককে নিয়ে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।
সাজিয়া করিম নামে এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন, ঘাড়ত্যাড়া টিচার মানা যায়, কিন্তু চরিত্রহীন মানা যায় না। এই ব্যাটা যদি টিচার থেকে যায় তাহলে তো এ রকম ঘটনা আরও ঘটবে।
জাহিরুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন, ‘রক্ষকই যদি হয় ভক্ষক তাহলে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
এ বিষয়ে বেরোবি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. তানজিউল ইসলাম জীবন বলেন, ‘অডিও আমি এখনো শুনিনি। ছাত্ররা বলল আমার নামে অডিও ছাড়ছে একপক্ষ জোরে স্পষ্ট আর আমার কণ্ঠ নাকি শোনায় যায় না। আমি তো বলব এটা ষড়যন্ত্র। আমার কণ্ঠ হয়তো বসে দেওয়া হইছে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে।’
এর আগে সাদিয়া সুভা নামে ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা হয়, ‘শিক্ষক বলতে আমরা বুঝি গাইড, ফিলোসফার, ছাত্রদের মাঝে মনুষ্যত্ব সৃষ্টি করা সর্বোপরি মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির পর এমন একজন শিক্ষককে পেলাম যেখানে শিক্ষক মানে নারীলোভী, অর্থলোভী এক নোংরা মানুষ তানজিউল ইসলাম জীবন। অসংখ্য ছাত্রী তার দ্বারা মানসিক, শারীরিক নির্যাতনের শিকার। ভবিষ্যতে আর কোনো ছাত্রীকে যেন নিগৃহীত হতে না হয়, তাই কিছু লিখলাম।
এই শিক্ষক যেদিন থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পা রেখেছে তখন থেকে নিরীহ, সহজ-সরল, সাধারণ মেয়েদের টার্গেট করে। শারীরিকভাবে কীভাবে হেনস্তা করা যায়। সে এখন পর্যন্ত অনেক মেয়েকে নম্বর দেওয়ার নামে, প্রথম বানিয়ে দেওয়ার নামে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বানিয়ে দেওয়ার নামে কুপ্রস্তাব দেয়। আর এভাবে প্রত্যেক ব্যাচে তার টার্গেটে যে মেয়েগুলো থাকে তাদের শারীরিক নির্যাতন করেই আসছে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত।
আর তার এই নোংরামির বিষয়গুলো জনসম্মুখে নিয়ে আসতে ভয় পায় রানিং শিক্ষার্থীরা।কারণ তিনি ছাত্রত্ব ও নম্বর কমিয়ে দেওয়ার মতো মানসিক চাপ দিতেই থাকে। শিক্ষার্থী হিসেবে নৈতিকতার জায়গা থেকে কথা বলার এখন সময় এসেছে বলে আমি মনে করি।’
এ ঘটনায় শিক্ষক ড. তানজিউল ইসলাম জীবন রংপুর তাজহাট থানায় একটি সধারণ ডায়েরি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাকে নিয়ে ফেসবুকে সাদিয়া সুভা আইডি থেকে কুরুচিপূর্ণ মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। আমার নামে মিথ্যা তথ্য, অপপ্রচারসহ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে। চেষ্টা করেও অপপ্রচারকারীর পরিচয় শনাক্ত করতে ব্যর্থ হই। সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত না থাকায় বিষয়টি আপাতত সাধারণ ডায়েরিভূক্ত করে রাখা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলী বলেন, ‘অডিও ক্লিপের বিষয়টি শুনেছি কতটুকু সত্য তা জানি না, যেহেতু এটি ডিপার্টমেন্টালি বিষয় যদি ও রকম কিছু হয়ে থাকে ওই ছাত্রীকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিতে হবে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’