তারাবি নামাজের ফজিলত
পবিত্র রমজানের বিশেষ ইবাদত তারাবির নামাজ। এটি মূলত পবিত্র রমজান মাসের প্রাণ। আরবি তারবিহা শব্দের বহুবচন তারাবি, যার অর্থ বিশ্রাম করা, আরাম করা। যেহেতু এই নামাজে চার রাকাত পরপর বিশ্রাম নেওয়া হয়, তাই এর নাম তারাবি।পবিত্র রমজান মাসে এশা ও বিতরের নামাজের মাঝে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, শরিয়তের পরিভাষায় এই নামাজকেই তারাবির নামাজ বলা হয়।
প্রিয় নবী (স.) তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং অন্যদের পড়তে উৎসাহ দিয়েছেন। তারাবির নামাজ ফরজ বা ওয়াজিব নয়। বরং সুন্নত। ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নবীজি দুই বা তিন দিন জামাতে তারাবি পড়ানোর পর চতুর্থ দিন আর পড়াননি। (দ্র: সহিহ বুখারি: ৯২৪; সহিহ মুসলিম: ৭৬১) নবীজির ইনতেকালের পর সাহাবায়ে কেরাম গুরুত্বের সঙ্গে তারাবি নামাজ আদায় করেছেন।
ইসলামি শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, মুসলিম নারী-পুরুষ সবার জন্য তারাবি নামাজ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রমজানের চাঁদ দেখা গেলে সে রাত থেকেই তারাবি নামাজ শুরু হয়। যারা শরীয়তসম্মত গ্রহণযোগ্য ওজরের কারণে রোজা পালনে অক্ষম, তারাও সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে তারাবি নামাজ পড়বেন। এই নামাজ ওজর ছাড়া পরিত্যাগ করা বড় গুনাহ।
তারাবির নামাজ ২০ রাকাত আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। পুরুষদের জন্য জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। যদি মহল্লার কিছু লোক জামাতের সঙ্গে আদায় করে নেয়, তাহলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। নতুবা সবাই গুনাহগার হবে। আবার কোনো ব্যক্তি যদি ঘরে একাকী তারাবি আদায় করে, তাহলে তার তারাবির সুন্নত আদায় হয়ে যাবে; তবে জামাতের সওয়াব থেকে সে বঞ্চিত হবে।
আরও পড়ুন:
কোন সময় দোয়া করলে বেশি কবুল হয়?
হাদিসে তারাবির নামাজের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৩৭)
হাদিসটির উদ্দেশ্য হলো- যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে এবং আল্লাহর দরবারে আজর ও সাওয়াবের আশায় রমজানের রাতে নামাজ, জিকির, তেলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদতের মধ্যে মশগুল থাকবে, আল্লাহ তার পিছনের যাবতীয় সগিরা গুনাহ মাফ করে দেবেন। কবিরা গুনাহের জন্য অবশ্যই খালেস নিয়তে তাওবা করতে হবে।
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবির নামাজকে সুন্নত করেছি। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে দিনে রোজা পালন করবে এবং রাতে তারাবির নামাজ আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এমন পবিত্র হবে, যেমন নবজাতক শিশু মায়ের গর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়।’ (নাসায়ি)
আরও পড়ুন:
হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ল ২১ দিন
তারাবি নামাজ কিয়ামুল্লাইলের অন্তর্ভুক্ত। তারাবি নামাজ ২০ রাকাত হলেও কেউ চাইলে এর বেশিও পড়তে পারেন। এরপর চাইলে তাহাজ্জুদ পড়তে পারেন। সবশেষে বিতির পড়বেন। তখন তার এশাপরবর্তী তারাবিসহ সব ইবাদত মিলে হবে কিয়ামুল্লাইল।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র রমজানে তারাবির নামাজ যথাযথভাবে পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।