১৬ বছর পর নিজের অধিকার ফিরে পেলেন জবি শিক্ষক
দীর্ঘ ১৬ বছরের আইনি লড়াই করে নিজেদের অধিকার ফিরে পেয়েছে ২৭ তম বিসিএস এর নিয়োগ বঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জন। এদিকে নিয়োগ বঞ্চিতদের মধ্যে একজন ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চেয়ারম্যান মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। আপিল বিভাগের দেওয়া নির্দেশ মতে ২৭ তম বিসিএস এর নিয়োগ বঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনকে আবারও নিয়োগ দেওয়া হবে। এর ফলে দীর্ঘ ১৭ বছর পর নিয়োগ পাচ্ছেন তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর বলেন, ‘তৎকালীন সময়ে বলা হয়েছিল ২৭ তম বিসিএসে দুর্নীতি হয়েছে। পিএসসি এবং সরকার থেকে কয়েকবার তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হয়,তদন্তে কোনো দুর্নীতি প্রমাণ পাওয়া যায় নাই বলে তারা জানান। কিন্তু তারপরেও তৎকালীন ১/১১ জরুরী সরকার এটা কোন নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে এক কথায় বাতিল করে দেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শহীদ মিনারে এক মাস ধরে অনশন করেছিলাম। আমরা তাদের আহ্বান করেছিলাম আপনারা আবারও তদন্ত করেন। যারা দোষী তাদেরকে বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু তারা সেটা না করে এক কলমের খোঁচায় ২৭ তম বিসিএস বাতিল করে দেন।
আমরা তখন হাইকোর্টে মামলা করেছিলাম এবং কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু হাসিনা সরকার এর বিরুদ্ধে আপিল করে এবং কোট আমাদের আর্গুমেন্ট গুলো ভালভাবে না শুনেই হাইকোর্টের রায়কে বাতিল করে দেন। এরপর সম্প্রতি আমরা আপিল বিভাগে রিভিউ পিটিশন দায়ের করলে মাননীয় আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে উক্ত হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রাখেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলা হওয়ার আগে আমরা শহীদ মিনারে অনশনকালীন সময়ে তৎকালীন ১/১১ এর জরুরী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান এসে চাকুরী ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং আমাদের অনশন ভাঙান। তিনি আমাদেরকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, ২৭ তম বিসিএসের বাতিল আদেশ বাতিল করে আপনাদের দাবি পূরণ করা হবে। তবে মঈন ইউ আহমেদের হস্তক্ষেপের কারণে সেটা তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। আমরা ওই সময় এই তথ্য পেয়েছিলাম। তখন মূলত আমরা প্রতারিত হয়েছিলাম। আজ আমরা ১১৩৭ জন আমাদের অধিকার ফিরে পেয়ে অনেক আনন্দিত।এখানে শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়েছে।’
জানা যায়, আদেশে বলা হয়, গত বছরের ৭ নভেম্বর ২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনের পক্ষে করা আপিল শুনবেন। এ সংক্রান্ত রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ ‘লিভ টু আপিল’ মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
২৭ বিসিএসে প্রথমবারের মৌখিক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে ২০১০ সালের ১১ জুলাই আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১ হাজার ১৩৭ জনের পক্ষে ১৪০ জন পৃথক আবেদন করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর সামাজিক বিজ্ঞান থেকে স্নাতক ও ১৯৯৮ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন। ২০১৩ সালে তিনি জাপানের ওয়েসডা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর এমএ সম্পূর্ণ করেন।