জাবিতে মুছে ফেলা হলো শেখ পরিবারের ম্যুরাল ও স্মৃতিচিহ্ন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সব নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন মুছে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া দিল্লীতে বসে শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার রাত ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় জুলাই গণহত্যার ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
জুলাই গণহত্যার ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের পর রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটে গিয়ে সেখানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও আল-বেরুনী হলের দেওয়ালের আঁকা গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্রে রঙ ঢেলে মুছে দেন। পরে শেখ হাসিনা হলের সম্মুখে অবস্থান নিয়ে সেখানে থাকে শেখ হাসিননার ম্যুরালটিও ভেঙে ফেলা হয়। এছাড়া শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা ওই হলের নাম পরিবর্তন করে 'বিজয়-২৪ হল' রাখেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘মুজিববাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, 'মুজিববাদ-মুজিববাদ, মুর্দাবাদ-মুর্দাবাদ', 'ফ্যাসিবাদের স্মৃতিচিহ্ন, করে দাও নিশ্চিহ্ন', 'ফ্যাসিবাদের আস্তানা, ভেঙে দাও-গুড়িয়ে দাও', 'ইনকিলাব-ইনকিলাব, জিন্দাবাদ-জিন্দাবাদ', 'অ্যাকশন টু অ্যাকশন, খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'সন্ত্রাসী লীগের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'হেলমেটলীগের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন', ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে শেখ পরিবারের ম্যুরাল ভাঙতে ও গ্রাফিতি মুছতে দেখা যায়।
পরে রাত ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নামফলক ভাঙচুর করতে আসলে ওই হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী বাধা দেন এবং তাদের হলের বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান। এ সময় হলের কতিপয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নামফলক ভাঙচুর করতে আসা শিক্ষার্থীদের কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা শাবল ও লাঠি দিয়ে হলের নামফলক ভেঙ্গে নামিয়ে ফেলে। সেই সঙ্গে হলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তও নেন তারা৷
নৃবিজ্ঞান ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘খুনি হাসিনা ভারতে থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, এতে ছাত্র-জনতা ফুসে ফুলে উঠেছে। এছাড়া ফ্যাসিস্ট মুজিবকে ঘিরে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা ব্যবসা করেছে, সেখান থেকে ফ্যাসিবাদ গড়ে উঠেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই ফ্যাসিবাদের চিহ্নকে ভেঙে দিচ্ছি। এর মাধ্যমে আর কেউ যাতে ফ্যাসিস্ট মুজিবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে না পারে, এই বার্তা দিচ্ছে ছাত্রসমাজ।’
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
জাবি ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি নবীনূর ইসলাম নবীন বলেন, ‘পতিত হাসিনা ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আপামর জনতা ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পতিত হাসিনার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত আছে। খুনি হাসিনাকে সতর্ক করে বলতে চাই, যদি এরকম ষড়যন্ত্র ও কর্মসূচি দেন, তাহলে বাংলার জনগন তা প্রতিহত করবে। বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতা আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করেছে এবং সামনের সকল ষড়যন্ত্রকে রুখে দিবে।’
এ সময় জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক ইয়াহিয়া জিসান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু আমরা এ ষড়যন্ত্র মেনে নেব না। দ্রুত শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং গণহত্যার বিচার করতে হবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও মুজিববাদের কোনো স্মৃতি এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে না।’