ট্রান্সকম সিইও সিমিনসহ ৬ কর্মকর্তার জামিন বাতিল, রিমান্ড চেয়ে আবেদন

আদালত প্রতিবেদক
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৩২
শেয়ার :
ট্রান্সকম সিইও সিমিনসহ ৬ কর্মকর্তার জামিন বাতিল, রিমান্ড চেয়ে আবেদন

দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী গ্রুপ ট্রান্সকম লিমিটেডের অধিকাংশ শেয়ার জালিয়াতি করে দখল ও ভুয়া পারিবারিক সেটেলেমেন্ট দলিল তৈরির মামলায় গ্রুপটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমানসহ ৬ কর্মকর্তার জামিন বাতিল করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিভিশন পিটিশন দাখিল করা হয়েছে।

মামলা দুটির বাদি ট্রান্সকমের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাযরেহ হক পৃথক দুটি রিভিশন আবেদন ফাইল করেছেন। আগামীকাল সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আজ রবিবার গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন শেরযাহ হকের আইনজীবী আহসানুল করিম।

জামিন বাতিল ও রিমান্ড চাওয়া মামলার অন্য অসামিরা হলেন ট্রান্সকম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স-আইন) মো. ফখরুজ্জামান ভূঁইয়া, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) কামরুল হাসান, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) আবদুল্লাহ আল মামুন, সহকারী কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ও ব্যবস্থাপক (কোম্পানি সেক্রেটারি) আবু ইউসূফ মো. সিদ্দিক।

গত ২৯ মে আসামিদের জামিন বাতিল করে পৃথক দুই মামলার একটিতে ৭ দিন ও আরেকটিতে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে পৃথক দুটি আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত সেই আবেদন নাকচ করে দেন। সিএমএম আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধে দুটি রিভিশন আবেদনে সিএমএম কোর্টের আদেশ বাতিল চাওয়া হয়েছে এবং তদন্তের স্বার্থে আসামিদের জামিন বাতিল করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে এই মামলাগুলো গুলশান থানায় দায়ের করে লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাযরেহ হক। এরপর এই মামলার কয়েক আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তারা জামিন পান আর বিদেশ পলাতক থাকা সিমিন রহমান দেশে এসে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।

ভূয়া দলিল সৃষ্টি করে ট্রান্সকমের অধিকাংশ শেয়ার দখলের মামলায় লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাযরেহ হক বলেছেন, ‘আমার বাবা মৃত লতিফুর রহমান তার জীবদ্দশায় ট্রান্সকম লিমিটেডের ২৩ হাজার ৬০০টি শেয়ারের মালিক থাকা অবস্থায় ২০২০ সালের ১ জুলাই মারা যান। আমিসহ অন্যান্য উত্তরাধিকারী আমার বাবার ওই শেয়ারের মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী মালিক। আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকা অবস্থায় কুমিল্লায় মৃত্যুবরণ করেন। মারা যাবার প্রায় এক বছর আগে থেকেই তিনি কুমিল্লাতে অবস্থান করছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা ২৩ হাজার ৬০০ শেয়ার থেকে এক নম্বর আসামি (সিমিন রহমান) আমাকে এবং আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে বঞ্চিত করার জন্য অবৈধভাবে নিজের নামে বেশি শেয়ার ট্রান্সফার করে হস্তগত করার হীন অসৎ উদ্দেশ্যে এক নম্বর আসামি ২ থেকে ৫ নম্বর আসামিদের (ট্রান্সকম কর্মকর্তা) প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তিনটি ফর্ম ১১৭ (হস্তান্তর দলিল)-সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার ট্রান্সফারের বিভিন্ন কাগজপত্র আমার এবং আমার ভাইয়ের অজ্ঞাতসারে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে তৈরি করেন। আমার বাবার মৃত্যুর পর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা কাগজপত্র ৩ নম্বর আসামি (কামরুল হাসান) রেজিস্ট্রার অব জয়েন স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে জমা দেন। এক নম্বর আসামি (সিমিন রহমান) থেকে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ৪ ও ৫ নম্বর আসামি (মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ও আবু ইউসুফ মো. সিদ্দিক) জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা কাগজে সাক্ষী হিসেবে সই করেন।’

শাযরেহ হক মামলার এজাহারে বলেছেন, ‘আসামিরা পরস্পর ষড়যন্ত্র করে আমার, আমার বাবার এবং ভাইয়ের সই জাল করে নিজেরাই ফর্ম ১১৭-তে সই করেন। আমার বাবা মারা যাবার পর প্রথমে ২ নম্বর আসামি (আইন উপদেষ্টা ফখরুজ্জামান ভূঁইয়া) গত বছরের ২৩ মার্চ এবং পরে ২ ও ৩ নম্বর আসামি (কামরুল হাসান) ১৪ মে আমাকে জানায় যে ‘‘আপনার বাবা, আপনিসহ আপনার ভাইবোনদের শেয়ার হস্তান্তর করে দিয়েছেন। পরে আমি জয়েন স্টক থেকে শেয়ার হস্তান্তরের নথিপত্র সংগ্রহ করি। অনলাইনের ওই দলিলাদি অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১৩ জুন আমার বাবা আমাকে চার হাজার ২৭০টি শেয়ার, আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে চার হাজার ২৭০টি শেয়ার এবং এক নম্বর আসামিকে (সিমিন রহমান) ১৪ হাজার ১৬০টি শেয়ার হস্তান্তর করেছেন মর্মে ৩ নম্বর আসামি কামরুল শেয়ার হস্তান্তর সংক্রান্ত দলিল দাখিল করেছেন।’

এজাহারে তিনি আরও বলেন, ‘কোনো সময়ই আমি কিংবা আমার ভাই ওই হস্তান্তর সংক্রান্ত ফর্ম-১১৭ দলিলে সই কিংবা টিপসই প্রদান করিনি। আমার বাবা তার জীবদ্দশায় কখনো হস্তান্তর সংক্রান্ত দলিলে সই কিংবা টিপসই করেননি। আসামিরা জাল-জালিয়াতি করে শরিয়া অনুযায়ী উত্তরাধিকারদের মধ্যে বণ্টন না করে আমাদের সই জাল করে শেয়ার হস্তগত করেছেন।’

ভূয়া পারিবারিক সেটেলমন্টে দলিল তৈরির মামলায় শাযরেহ হক বলেন, ‘আমিসহ অন্যান্য উত্তরাধিকারী আমার বাবার সব স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তির মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী ওয়ারিশ। এক নম্বর আসামি (সিমিন রহমান) ও দুই নম্বর আসামি (শাহনাজ রহমান) আমার বাবার প্রতিষ্ঠিত ট্রান্সকম গ্রুপের শেয়ার এবং পজিশন নিজেদের অনুকূলে হস্তগত করার অসৎ উদ্দেশ্যে ৩-৫ নম্বর আসামির (ফখরুজ্জামান ভুইয়া ও যারাইফ আয়াত হোসেন) সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ডিড অব সেটেলমেন্ট তৈরি করেন। যেখানে আমার, আমার বাবা এবং আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের সই জাল করে আসামিরা নিজেরাই সই করেন। আসামিরা আমার দুই ছেলে যোহেব আসরার হক এবং মিকাইল ইমান হকের সই জাল করে নিজেরাই ডিড অব সেটেলমেন্টের সাক্ষীর কলামে সই করেন। আমাদের সঙ্গে এক নম্বর আসামি সিমিন রহমান ও ২ নম্বর আসামি শাহনাজ রহমানের কখনও কোনোকালে ডিড অব সেটেলমেন্ট সম্পাদিত হয়নি। আমি, আমার বাবা, আমার ভাই ও আমার দুই ছেলে ডিড অব সেটেলমেন্টে কখনও কোনো সই করিনি।  

শাযরেহ হকের অভিযোগ, ৩ নম্বর আসামি (ফখরুল) তার অপকর্মের পুরস্কার হিসেবে ২০২১ সালে কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স-লিগ্যাল) হিসেবে প্রমোশন পায়। ৪ নম্বর আসামি (কামরুল) তার অপকর্মের পুরস্কার হিসেবে ২০২৩ সালে কোম্পানির পরিচালক হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োজিত হন এবং ১০০টি শেয়ার দুই নম্বর আসামির (শাহনাজ রহমান) কাছ থেকে অভিহিত মূল্যে খরিদ করেন, যা বেআইনি।’