অটোরিকশার ধাক্কায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু /
৮ দফা দাবিতে জাবিতে ব্লকেড কর্মসূচি
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী (জাবি) আফসানা করিম রাচি নিহতের ঘটনায় ৮ দফা দাবিতে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার সকাল পৌনে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে তালা মেরে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
জানা গেছে, ফটকের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটি দরজায় তালা লাগিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। ওই সময় কোনো যানবাহনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন গেটে অবস্থানরত অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ‘আমার বোন মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘আমরা সবাই রাচির ভাই, রাচি হত্যার বিচার চাই’, ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেন বাহিরে?’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
তাদের দাবিগুলো হলো- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার করতে হবে; পর্যাপ্ত সড়কবাতি, ফুটপাত ও গতিরোধক স্থাপন করতে হবে এবং যানবাহনে গতি পরিমাপক রাখতে হবে; নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারকে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; মেডিকেল সেন্টারের জরুরি সেবার মানোন্নয়ন করতে হবে; নিবন্ধনহীন সব যানবাহন ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং নিবন্ধন প্রদানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে; সব রিকশাচালকের প্রশিক্ষণপূর্বক নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে; অদক্ষ নিরাপত্তাকর্মীদের প্রত্যাহার করতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো সচল করতে হবে।
ব্লকেড কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী দুর্বার আদি বলেন, ‘প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল ক্যাম্পাসের মেডিকেলে উপযুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করা। একজন শিক্ষার্থী যদি ক্যাম্পাসে আহত হন, তাকে ক্যাম্পাসের মেডিকেলে নেওয়ার পর তার যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা। আফসানার ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। এটাকে প্রশাসনের ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে হবে। ক্যাম্পাসে শুধু রিকশা নয়, মোটরসাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণের কোনো পদক্ষেপও নেই। নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে তারা জাহাঙ্গীরনগর ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন।’
ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী লামিশা জামান বলেন, ‘গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে, সেটাকে আমরা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড বলে চিহ্নিত করছি। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আমরা আট দফা দাবি জানিয়েছি। আজকের কর্মসূচি সকাল পৌনে সাতটার দিকে শুরু করেছি। এর আগে বিভিন্ন হলে হলে মাইকিং করেছি আমাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে।’
এদিকে রাচির মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে ডেপুটি রেজিস্ট্রারসহ চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাময়িক বরখাস্তরা হলেন-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবদুর রহমান বাবুল, নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাসেল মিয়া, সহকারী সুপারভাইজার আব্দুস সালাম ও ডিউটি গার্ড মনসুর রহমান প্রামাণিক।
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার-সংলগ্ন নতুন কলাভবনের সামনের রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় দুর্ঘটনাকবলিত হন।
সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, সন্ধ্যার দিকে কলাভবনের সামনের রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন রাচি। এ সময় হঠাৎ দ্রুতগামী একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা তাকে ধাক্কা দিলে সড়কে ছিটকে পড়ে মাথা ও মুখে গুরুতর জখম হন। তাকে উদ্ধার করে জাবির কেন্দ্রীয় মেডিকেল সেন্টারে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত আফসানা করিম রাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার বাড়ি শেরপুর জেলায়। তার বাড়ি শেরপুর জেলায়।