কেন মহানগর পিপির দায়িত্ব নিচ্ছেন না সমাজী
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন না সিনিয়র আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। বিএনপিদলীয় আইনজীবীরা তার নিয়োগে বিরোধিতা করে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দায়িত্ব না নেওয়ার বিষয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্টস্থ সলিসিটর সলিসিটর অনুবিভাগে আজ বৃহস্পতিবার একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘অতি সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ অন্যান্য সূত্রে জ্ঞাত হই যে, আপনার কার্যালয় হইতে ইস্যুকৃত পত্রযোগে আমাকে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর পদে নিয়োগ দান করা হইয়াছে, তজ্জন্য আমি উপদেষ্টা মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতেছি। আমি ঢাকা আইনজীবী সমিতির নিয়মিত সদস্য হিসেবে সুদীর্ঘ প্রায় ৩৮ বৎসর যাবৎ সততা ও নিষ্ঠার সহিত পেশাগত দায়িত্ব পালন করিয়া আসিতেছি। পেশাগত মর্যাদাকে বজায় রাখার স্বার্থে ও আমার ব্যক্তিগত/পারিবারিক কারণে বিষয়ভুক্ত মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর পদে যোগদান করিতে অপারগতা প্রকাশ করিতেছি বিধায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত। রাষ্ট্র সংস্কার কার্যে আমার সমর্থন রহিয়াছে এবং প্রশাসনের চাহিত মতে ও ভবিষ্যতে আইনি সেবা দানে সর্বাত্মক সহযোগিতা করিব।’
এর আগে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সলিসিটর মাহরুফ হোসাইন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে গত ২৭ আগস্ট তাকে নিয়োগ প্রদান করেন। যা বুধবার মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার পর সেদিন দুপুরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সাধারণ আইনজীবীর ব্যানারে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে নিয়োগ বাতিল চেয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সেখানে অবিলম্বে এহসানুল হক সমাজীর নিয়োগ বাতিলের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানান। তা না হলে তাকে এ দায়িত্বপালন করতে দেওয়া হবে না মর্মে হুমকি প্রদান করেন। তারা সমাজীকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রেতাত্মা বলে অভিহিত করেন। উক্ত সমাবেশে ঢাকা আইনজীবী সমিতির বিএনপি দলীয় সাবেক সভাপতি বোরহান উদ্দিন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকীকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন:
ভারত সফরে গেলেন প্রধান বিচারপতি
উল্লেখ্য, বিগত ওয়ান ইলেভেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এহসানুল হক সমাজী ২ বছর ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে সরিয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ পান অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর দায়িত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আব্দুল্লাহ আবু আর আদালতেই আসেননি।
সমাজি ২০০৭-২০০৯ মেয়াদে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ছাড়াও বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তার মেয়াদে তিনি রাষ্ট্র/প্রসিকিউশনের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ফৌজদারি আদালতে সমস্ত মামলা পরিচালনা করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালের এলএলবি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৬ সালের ৩০ অক্টোবর একজন আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। ওই বছরের ৪ নভেম্বর তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৮৮ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯২ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন।