উদ্ভাবনী ফিচারের এসিতে ওয়ালটনের বড় বিনিয়োগ
সাক্ষাৎকার
চলতি বছর রেকর্ডভাঙা গরম; ঘরে-বাইরে থাকা কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) কেনার পরিকল্পনা করছেন। বিষয়টি মাথায় রেখে এসি নিয়ে বিশেষ আয়োজন করেছে আমাদের সময়। এই আয়োজনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ওয়ালটন এয়ার কন্ডিশনারের চিফ বিজনেস অফিসার মো. তানভীর রহমান।
আমাদের সময় : দেশে এসির বাজার কতটুকু? আপনার প্রতিষ্ঠান কতটা সরবরাহ করতে পারছে?
মো. তানভীর রহমান : স্থানীয় বাজারে এ বছর এসির চাহিদা ৬ লাখ ইউনিট ছাড়াবে। বর্তমানে শেয়ার মার্কেটের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ওয়ালটন।
আমাদের সময় : ক্রমবর্ধমান বাজারে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মো. তানভীর রহমান : দেশের ক্রমবর্ধমান এসির বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রাখার লক্ষ্যে সাশ্রয়ী দামে পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী সর্বাধুনিক ফিচারের এসি উৎপাদন ও বাজারজাতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি আমরা। সে জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে বিপুল বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
আমাদের সময় : আপনাদের এসিগুলোর স্বকীয়তা কি?
মো. তানভীর রহমান : বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন, যার স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন টিম রয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের অন্যতম
বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এসি উৎপাদন করছে ওয়ালটন। যা বিএসটিআইয়ের ৬ স্টার রেটিং প্রাপ্ত। যত বেশি স্টার রেটিং, বিদ্যুৎ খরচ তত কম। এসব এসিতে রয়েছে ডিজিটাল ডিসপ্লে সুবিধা। এর বাইরে এসিতে আমরা কোটেক টেকনোলজি এনেছি। বাংলাদেশের অঞ্চলভিত্তিক পরিবেশ ও আবহাওয়া উপযোগী করে পণ্যটি ডেভেলপ করা হয়েছে। যাতে এসির কন্ডেন্সার ও ইভাপোরেটর স্থায়িত্ব দ্বিগুণেরও বেশি বাড়বে। ওয়ালটনের এসিতে স্মার্ট আইওটি প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই সংযুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে নিত্যনতুন ইনোভেশনের কাজ চলছে। ফলে গ্রাহকরা আরও উন্নত ডিজিটাল সার্ভিস পাচ্ছেন। এ ছাড়া এসিতে যুক্ত রয়েছে ভয়েস কন্ট্রোল সুবিধা। যাতে একটি এসি বাংলা ও ইংরেজি দুই মাধ্যমেই কমান্ড নিতে সক্ষম।
আমাদের সময় : ক্রেতার কোন দিকগুলোতে নজর রেখে এবার বাজারে এসি এনেছে আপনার প্রতিষ্ঠান?
মো. তানভীর রহমান : সাশ্রয়ী দামে আন্তর্জাতিক মানের সর্বোচ্চসংখ্যক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের পণ্য বাজারে ছেড়েছি আমরা। ওয়ালটন এসিতে রয়েছে এয়ার প্লাজমা প্রযুক্তি, আইওটি বেজড স্মার্ট কন্ট্রোল সিস্টেম, রিমোট ফাইন্ডার, ব্লুটুথ কন্ট্রোল, অফলাইন ভয়েস কন্ট্রোল, ইউভি কেয়ার, মরিচা প্রতিরোধক কোটেক টেকনোলজি, ফ্রস্ট ক্লিন, থ্রি-ইন-ওয়ান কনভার্টিবল টেকনোলজিসহ ইন্টিগ্রেটেড ৫-ইঞ্চ কালার টিএফটি ডিসপ্লে।
আমাদের সময় : স্বল্প আয়ের ক্রেতাদের জন্য কতটা ভাবছে আপনার ব্র্যান্ড?
মো. তানভীর রহমান : এসি এক সময় উচ্চবিত্তদের বিলাসী পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হলেও সেই ধারণা এখন ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। অসহনীয় গরমে একটু প্রশান্তি পেতে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সামর্থ্যবানদের পাশাপাশি এখন নিম্ন এবং নিম্নমধ্যবিত্তরা এসি কিনছেন। ওয়ালটন দেশে এসি উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করার পর থেকেই এসির দাম সাধারণ ক্রেতার হাতের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে।
আমাদের সময় : সাভির্সিং সুবিধা সরবরাহে কতটা নিবেদিত আপনার প্রতিষ্ঠান?
মো. তানভীর রহমান : দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চয়তা দিচ্ছে ওয়ালটন। গ্রাহকরা পাচ্ছেন ১ বছরের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি, কম্প্রেসরে ১০ বছর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি, ৩ বছরের স্পেয়ার পার্টস ওয়ারেন্টি এবং ফ্রি ক্লিনিং সার্ভিস। এ ছাড়া বাংলাদেশে আইএসও সার্টিফায়েড সর্ববৃহৎ সার্ভিস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ৮০টিরও অধিক সার্ভিস পয়েন্টের আওতায় ৩ হাজার ৫শরও বেশি সার্ভিস পার্টনারের মাধ্যমে গ্রাহকদের দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ওয়ালটন।
আমাদের সময় : এসি উৎপাদন শিল্পে বর্তমান প্রতিবন্ধকতাগুলো কি? আগামী অর্থবছর বাজেটে আপনাদের প্রত্যাশা?
মো. তানভীর রহমান : সরকারের কাছ থেকে পাওয়া নীতি-সহায়তাকে আমরা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দেশে এই শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটিয়েছি। আমদানিনির্ভর এই শিল্প এখন স্থানীয় উৎপাদননির্ভরতায় চলে এসেছে। শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের বিদ্যমান পলিসি সাপোর্ট অব্যাহত রাখা জরুরি। পাশাপাশি এনার্জি এফিসিয়েন্সি পণ্য উৎপাদনে আরও বেশি প্রণোদনা প্রদান করা উচিত। ওয়ালটনের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ভিআরএফ ও চিলার কমার্শিয়াল এসি উৎপাদনকারী নবম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু বিদ্যমান পলিসিতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। এখনো ভিআরএফের মতো উচ্চপ্রযুক্তির এসি উৎপাদনের কিছু কিছু কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক দিতে হচ্ছে। ফলে আমদানির তুলনায় দেশে উৎপাদনে খরচ বেশি পড়ছে। এই দিকটিতে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
আমাদের সময় : আগামীতে এসি রপ্তানির পরিকল্পনা আছে কিনা?
মো. তানভীর রহমান : ওয়ালটনের তৈরি আন্তর্জাতিক মানের এসি এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। স্থানীয় বাজারের মতো আন্তর্জাতিক বাজারেও ‘মেড ইন বাংলাদেশ’খ্যাত এসির শক্তিশালী অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বের বাজারে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছি আমরা। কয়েকটি দেশে সাবসিডিয়ারি এবং শাখা অফিস স্থাপন করেছি। দক্ষিণ কোরিয়ায় স্থাপন করেছি রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার। সেখানে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচারের উদ্ভাবনী পণ্যের পাশাপাশি ইউরোপ ও আমেরিকার স্ট্যান্ডার্ড, আবহাওয়া এবং ক্রেতাদের চাহিদা বিষয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।