জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যা: তোপের মুখে উপাচার্য, দিলেন আশ্বাস
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরোজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। এ সময় তিনি সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সুষ্ঠ তদন্ত করে দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।
শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে থেকে এসব আশ্বাস দেন।
উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, আমার হাতে আইনগতভাবে যতটুকু ক্ষমতা রয়েছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাবো। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে তদন্তের আওতায় আনা হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শুধু অবন্তিকা নয়, এরআগেও বিভিন্ন যৌন হয়রানির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিচার মেলেনি। এর জন্য অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। সে সব ঘটনারও বিচার করতে হবে।
জবাবে উপাচার্য বলেন, আমি নভেম্বরে দায়িত্ব নিয়েছি। এরপর থেকে যতগুলো অভিযোগ পেয়েছি সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। চলতি মাসেই সিন্ডিকেট সভায় সে সব অভিযোগের সুরাহা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত শিক্ষককে সহকারী প্রক্টর পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ সময় ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠ বিচারের জন্য লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন:
ইবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগে তালা!
এদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন শিক্ষক সমিতির সদস্য অধ্যাপক জাকির হোসেন ও সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার দাস। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন, সঙ্গীত বিভাগের চেয়ারম্যান ঝুমুর আহমেদ।
এর আগে উপাচার্যের নির্দেশে অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।
এদিকে ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দীকির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগ তুলেন। পরে দোষী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাস। তার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাস এলাকায় টায়ারে আগুন নিয়ে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মৃত ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০ টার দিকে প্রথমে ফেসবুকে পোস্ট দেন ফাইরুজ। এরপর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তিনি মারা গেছেন।