তারাবির নামাজের ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক
১১ মার্চ ২০২৪, ১১:৪২
শেয়ার :
তারাবির নামাজের ফজিলত

বছর ঘুরে এসেছে ত্যাগ ও সংযমের পবিত্র মাস রমজান। আর এই রমজান মাসে ফরজ রোজা সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু সুন্নত ইবাদত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রতিদিন রাতের তারাবি নামাজ।

গতকাল রবিবার সৌদি আরবে রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। তাই আজ সোমবার থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সিয়াম সাধনা শুরু হচ্ছে। আজ রোজার কর্মযজ্ঞ শুরু হবে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও অনেক দেশে।

ফলে যেসব দেশে আজ চাঁদ দেখা গেছে, সেসব দেশে রবিবার প্রথম তারাবি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার প্রথম রোজা পালন করবেন সেসব দেশের মুসলিমরা।

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশে শাবান মাস শেষ হচ্ছে সোমবার। সে অনুযায়ী সেসব দেশে সোমবার তারাবি এবং পরদিন মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রোজা শুরু হবে। বাংলাদেশে কবে থেকে রমজান ‍শুরু হবে, তা জানা যাবে আজ। সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সূচিত হয় রমজান মাস। তারাবির নামাজও পড়া শুরু হয় সেদিন থেকে। ইতোমধ্যে তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারাবির নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তারাবি নামাজের পরিচয়

তারাবির নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ ইবাদত। এ নামাজ নারী-পুরুষ উভয়ের ওপর সুন্নত। তবে পুরুষের জন্য তারাবির জামাত করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। আর নারীরা জামাত ছাড়াই একা একা পড়ে নেবে। রমজান মাসে তারাবি নামাজের মধ্যে একবার কোরআন খতম করা সুন্নত।

এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত দুই রাকাত করে দশ সালামে বিশ রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। কিন্তু তারাবি নামাজ অবশ্যই এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে।

আরবিতে ‘তারাবি’ শব্দের অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। তারাবি নামাজ পড়াকালে প্রতি চার রাকাত পর কিছু সময় বসে আরাম করার বিধান ইসলামী শরিয়তে রয়েছে। তাই এই নামাজকে তারাবি নামাজ বা সালাতুত তারাবি বলা হয়। প্রতি চার রাকাত পরপর আরাম করার কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, দরুদ শরিফ ইত্যাদি পাঠ করা যেতে পারে। তারাবি নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে অবশ্য গুনাহগার হবে। কিন্তু তারাবির কাজা ওয়াজিব হবে না। কারণ, সুন্নতের কাজা নেই। (ফাতাওয়া শামি : ২/৪৫; আহসানুল ফাতাওয়া : ৩/৫২৪)

তারাবি কত রাকাত?

রাসুল (সা.) কম-বেশি তারাবি নামাজ আদায়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি এই ইবাদত নিয়মিতভাবে করলে উম্মতের ওপর তা ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, তারাবি মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে তারাবি নামাজ ২০ রাকাত। খোলাফায়ে রাশেদিন ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করেছেন। সাহাবায়ে কেরামের আমল ২০ রাকাতের ওপর। হজরত ওমর (রা.) তার শাসনামলে ২০ রাকাত তারাবি আদায়ের জন্য কঠোর নির্দেশ জারি করে তা বাস্তবায়ন করেছেন। আর রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার এবং আমার খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নত দৃঢ়ভাবে ধারণ করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য।

সারকথা হলো তারাবি নামাজ হচ্ছে সুন্নত। আর মুসলমানের ঐক্য হচ্ছে ফরজ। তাই তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিভক্তি বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ, মহানবী (সা.)-এর সময় থেকে যুগ পরম্পরায় ২০ রাকাত তারাবির আমলই সর্বযুগে সর্বত্র প্রতিপালিত হয়ে এসেছে। বর্তমানেও রমজান মাসে তারাবি নামাজ ২০ রাকাত পড়তে হবে। (কিফায়াতুল মুফতি: ৩/৩৬১; কিতাবুল ফিকহি আলাল মাজাহিবিল আরবায়া : ১/৪৪৩)

তারাবি নামাজের ফজিলত

রমজান মাসে রাসুল (সা.) নিজে তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে পড়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজ জামাতে আদায় করা এবং এতে কোরআন শরিফ খতম করা বড় সওয়াবের কাজ। তবে ঘরে বা মসজিদে সুরা কেরাতের মাধ্যমে আদায় করলেও সওয়াব পাওয়া যায়। রমজানে তারাবি নামাজ আদায়কারীর সমস্ত গুনাহ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেবেন।

এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবি নামাজ আদায় করে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’ (বুখারি : ২০৪৭)

আরও বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তার জীবনের আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (মিশকাত, হাদিস : ১৮৬২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিকভাবে তারাবির নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।