লন্ডনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবসটি উপলক্ষে মিশনের বঙ্গবন্ধু লাউঞ্জে এক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের (উত্তর) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।
মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এ ঐতিহাসিক ভাষণই ছিল মূলত বাঙালির স্বাধীনতার ঘোষণা। কিন্তু এ ঘোষণা তিনি তার অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে দিয়েছেন বলেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণের ও মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা ধারণ করেই আজ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন।’
হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, ‘বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল মূলত বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র ও মুক্তির সনদ। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটিকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এর শ্রেষ্ঠত্ব ও গুরুত্ব আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজ হতে শতবর্ষ পরেও এ ভাষণ সব দেশের সব নিপীড়িত ও স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির দিক-নির্দেশনা হয়ে থাকবে।’
আরও পড়ুন:
২৪ দিনে রেমিট্যান্স এল ১৪৯ কোটি ডলার
হাইকমিশনার ইউনেস্কো থেকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটির ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ও ভূমিকার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে এ জন্য তার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
লন্ডন মিশনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আইরিশ, স্কটিশ ও ওয়েলস ভাষায় প্রকাশ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘এর ফলে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এ তিন ভাষায় অনেক সমাদৃত হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে লন্ডন মিশন আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশত বার্ষিকী টক’-এ নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বঙ্গবন্ধুকে তার ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল আদর্শের জন্য বিশ্ববন্ধু হিসেবে অভিহিত করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বিভিন্ন দেশের মহান নেতাদের ঐতিহাসিক বক্তৃতার উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে অতুলনীয় ভাষণ হিসেবে অভিহিত করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান, কাউন্সিলর মঈন কাদরি, যুক্তরাজ্যে ৭ মার্চ ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি আনসার আহমদ উল্লাহ, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির শাহিনা আক্তার, আবদুল আহাদ চৌধুরী ও সেলিম আহমেদ। বঙ্গবন্ধুর প্রতি উৎসর্গ করে নির্মলেন্দু গুণের বিখ্যাত কবিতা ‘স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ আবৃত্তি করেন শহিদুল ইসলাম সাগর।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে এ উপলক্ষে দেওয়া রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের শান্তি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
এ উপলক্ষে হাইকমিশনার অতিথিদের নিয়ে একটি বিশেষ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন। মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সকালে হাইকমিশনার হাইকমিশন প্রাঙ্গণে মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচির সূচনা করেন।