গ্রিসে বৈধ হলেন ১১ হাজার বাংলাদেশি

গ্রিস প্রতিনিধি
০৯ জানুয়ারী ২০২৪, ১৬:৩৮
শেয়ার :
গ্রিসে বৈধ হলেন ১১ হাজার বাংলাদেশি

গ্রিসে সমঝোতা চুক্তির আওতায় প্রথম ধাপে দূতাবাসের মাধ্যমে নিবন্ধন করে বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ১০ হাজার ৮৩৩ বাংলাদেশি। অনেক দিন পর ইউরোপের দেশটিতে রেসিডেন্স কার্ড পেয়ে খুশি প্রবাসীরা।

সদ্য বৈধতার আওতায় আসা গ্রিস প্রবাসী মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘আমি ১০ বছর ধরে গ্রিসে আছি। আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন মারা গেছেন, কিন্তু আমি বৈধ না হওয়ায় দেশে যেতে পারিনি। দীর্ঘদিন পর এবার দেশে এসে বিয়েও করেছি। ৩ মাস দেশে থেকে আবার চলে যাব গ্রিসে। প্রতি বছরেই এখন আসতে পারব।’

গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ বলেন, ‘দূতাবাসের দীর্ঘ দুই বছরের কূটনৈতিক তৎপরতার ফলশ্রুতিতে অবশেষে বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যকার সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল, সেটার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। এর ফলে দেশটিতে বসবাসরত আমাদের অবৈধ প্রবাসীরা বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সমঝোতা স্মারকের বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে এবং আইনের বিভিন্ন জটিলতা সব নিরসন হয়ে অবশেষে বৈধতার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘গ্রিসে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে অবস্থান করায় বাংলাদেশে যেতে পারছেন না, তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। তারা কিন্তু রেসিডেন্ট কার্ড পেয়েই বাংলাদেশে অনেকেই চলে গেছেন। ঘুরেও এসেছেন অনেকেই।’

২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেন গ্রিসের অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি। এ সময় তার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, দেশ গ্রিসে প্রতি বছরে ৪ হাজার করে বাংলাদেশি কর্মীকে মৌসুমি কাজের ভিসা দেওয়া হবে এবং গ্রিসে বসবাসরত ১৫ হাজার অবৈধ বাংলাদেশিকে ৫ বছরের জন্য অস্থায়ী বৈধতার আওতায় আনা হবে। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বৈধতা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে গ্রিস সরকার।

২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে চালু করা হয় আবেদন করার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। ধাপে ধাপে রেসিডেন্স পারমিট দেওয়া শুরু করে দেশটি। ইতিমধ্যে দেশটিতে বসবাসরত সিংহভাগ অবৈধ বাংলাদেশি বৈধভাবে বসবাস করছেন।

এর আগে ২০২২ সালে গ্রিসে বসবাসরত অবৈধ প্রবাসীদের আটকে অভিযান শুরু করে দেশটির পুলিশ। ওই সময় থেকে দেশটিতে বাংলাদেশিরা গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলেন। এথেন্সে প্রতি দিনই চলছিল বাংলাদেশিদের টার্গেট করে অবৈধদের ধরপাকড়। এ সময় অবৈধ প্রবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে তোড়জোড় শুরু করে গ্রিস সরকার। কয়েক দফায় প্রায় অর্ধশতাধিক বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে অভিবাসীদের মাধ্যে।

দেশটির পশ্চিম মানোলাদায় বাস করেন অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক। তারা মূলত দেশটিতে কৃষিখামারের সঙ্গে জড়িত। স্ট্রবেরি, জয়তুন ও মাল্টাসহ কৃষির বিভিন্ন খামারেই তাদের কাজ। গ্রিসে বসবাসরত শ্রমিকরা গ্রিস ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। এমনকি করোনা মহামারির মধ্যেও তারা কঠোর পরিশ্রম করে গ্রিসের কৃষিতে অবদান রাখছেন। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন বাংলাদেশিরা। অসুস্থ হলে পাচ্ছিলেন না চিকিৎসাসেবা। এভাবেই নানা আতঙ্কে, হতাশা ও কষ্টে দিন কাটছিল বাংলাদেশি প্রবাসীদের।