২১ দল শুধু ব্যালটেই
এবারের সংসদ নির্বাচনে যে ২৮টি দল অংশগ্রহণ করছে, তার মধ্যে সাতটি ছাড়া বাকি ২১টি দলকে ভোটের হিসাব-নিকাশে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন না ভোটার কিংবা বিশ্লেষকরা। ‘ছোট ছোট’ এসব দল একাধিক আসনে প্রার্থী দিলেও জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এমনকি এসব দলের শীর্ষ নেতাদের জয় পাওয়াও কঠিন। তবে এসব দলের প্রার্থীরা বলছেন, ভোট অবাধ হলে তারা সাফল্য পাবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবারো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে। তবে জোটের হিসাব-নিকাশে জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় পার্টি (জেপি), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও কল্যাণ পার্টির এক বা একাধিক প্রার্থীর জয় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বাকি ২১ দলের প্রার্থীরা ভোটারদের মধ্যে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি। এমনকি তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মতো নতুন নিবন্ধন পাওয়া দলগুলোও ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলতে পারেনি। প্রভাব ফেলতে পারেনি বাকি ১৮ দলÑ জাকের পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল।
তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন সিলেট-৬ আসনে। এ আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ। ভোটাররা বলছেন, তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসনের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই।
শমসের মবিন চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘সার্বিকভাবে নির্বাচনের পরিবেশ খুব ভালো। সিলেট-৬ আসনে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। তবে যেটা উদ্বেগের বিষয়Ñ ভোটাররা ভোটবিমুখ হয়ে পড়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করেছেনÑ ভোটের সঠিক গণনা কী হবে?’ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রশাসনের ভূমিকা একদমই নিরপেক্ষ। তারা চায় এবার একটা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হোক।’
তৃণমূল বিএনপির অন্যান্য আসনের বিষয়ে শমসের মবিন বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, তৃণমূল বিএনপি একদমই নতুন দল। তিন মাসের প্রস্তুতি আর ৭০ বছরের একটা সংগঠন এক নয়। আমাদের প্রার্থীরা অনেক জায়গায় জটিলতার মুখোমুখি
হয়েছে। তবে সুষ্ঠু ভোট হলে পাঁচ থেকে ছয়টি আসনে সোনালী আঁশের প্রার্থী বিজয়ী হতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘জনগণ যদি মনে করে সংসদ জবাবদিহিমূলক করবে,
তাহলে আমাদের ভোট দিয়ে সংসদে পাঠাবে। আমরা একমাত্র বিরোধী দল। ভোটের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো।’
‘ছোট দলের বড় নেতা’ হিসেবে ফরিদপুর-১ আসনে (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা) লড়ছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর। এ আসনে নৌকা প্রতীক না পেয়ে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন। ফলে বিএনপি প্রার্থীর জয় পাওয়া খুব একটা সহজ হবে না।
আরও পড়ুন:
গণভবনে ডাক পেলেন আ. লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা
আবু জাফর বলেন, ‘পরিবেশ ভালোই দেখছি। কিছু লোক বিরক্ত করছে; নির্বাচনবিরোধী কার্যকলাপ করছে। প্রশাসন থেকে কি করবে না করবে, সেটা বলতে পারছি না। তবে তাদের কথায় জনগণের সাড়া নেই। আশা করি ভালো সংখ্যায় সংসদ সদস্য হতে পারব।’
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) চেয়ারম্যান ও ঢাকা-১৭, ১৮ ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী এস এম আবুল কালাম আজাদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনে আছি এবং সরকার গঠনের পরও এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘জনগণ যদি ভোট দিতে পারে, তাহলে সংসদে আমাদের ভালো প্রতিনিধিত্ব থাকবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার আমাদের সময়কে বলেন, ‘ছোট দলগুলো ভোট কম পায় কয়েকটি কারণে। বাম দলগুলোকে মানুষ আপন মনে করে না। দেশের মানুষ ভাবে, তারা ইসলাম বিরোধী। অন্যদিকে ইসলামী দলের মধ্যে একটি দল যুদ্ধাপরাধী। তাই দুই ফোরামেই ভোটের হার কম।’
আরও পড়ুন:
পাল্টে যেতে পারে আন্দোলনের ধরন
অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আবার কিছু ছোট দল আছে, যারা ভোটের আগে সরব হয়। তারা জোট-মহাজোটে নিজেদের দাম বাড়ায়। সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিতে তারা ভোটে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। ছোট দলগুলোর অনেকেই হয়তো সেভাবেই সুযোগ পাবে।’